ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং

ব্যাংক হিসাবের প্রকারভেদ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - ব্যাংকের আমানত | NCTB BOOK

গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক বিভিন্ন প্রকারের হিসাব খোলার ব্যবস্থা রাখে। মানুষের জীবিকা, প্রয়োজন, সময় অবস্থান এবং চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাবকে নিম্নলিখিতভাবে প্রকারভেদ করা যায়।

১)চলতি হিসাব

২) সঞ্চয়ী হিসাব

৩) স্থায়ী হিসাব

এই তিন ধরনের হিসাব ছাড়াও ব্যাংক অন্য যেসব হিসাবের সুবিধা প্রদান করে তা নিম্নরূপ :

৪) স্কুল সঞ্চয়ী হিসাব

৫) বিমা সঞ্চয়ী হিসাব

৬) বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ী হিসাব

৭) ডিপোজিট পেনশন স্কিম হিসাব

৮) ঋণ আমানত হিসাব

৯) রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসাব (RFCD)

১) চলতি হিসাব : যে হিসাবের মাধ্যমে প্রতিদিন বা সপ্তাহে যতবার খুশি টাকা জমা রাখা যায় এবং প্রয়োজনমতো চাহিবামাত্র যতবার খুশি টাকা উত্তোলন করা যায়, তাকে চলতি হিসাব (Current Account) বলে। ব্যবসায়ীদের জন্য এ হিসাব সুবিধাজনক এবং এ হিসাবে সাধারণত কোনো সুদ প্রদান করা হয় না। এই হিসাবে জমাতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করা যেতে পারে।

২) সঞ্চয়ী হিসাব : যে হিসাবের মাধ্যমে প্রতিদিন বা সপ্তাহে যতবার খুশি টাকা জমা রাখা যায়, কিন্তু সপ্তাহে শুধু দুইবার বা নিয়ম অনুযায়ী টাকা উত্তোলন করা যায়, তাকে সঞ্চয়ী হিসাব (Savings Account) বলে। সাধারণত অব্যবসায়ী নির্দিষ্ট আয়ের জনগণ সঞ্চয়ের উদ্দেশ্য এ হিসাব খুলে থাকে। এ হিসাবে ব্যাংক স্বল্প হারে সুদ প্রদান করে থাকে। তবে আজকাল কোনো কোনো ব্যাংক টাকা জমা বা তোলার ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ করছে না।

৩) স্থায়ী হিসাব : একটি নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদের জন্য যে হিসাব খোলা হয়, তাকে স্থায়ী হিসাব (Fixed Deposit) বলে। স্থায়ী হিসাবে সাধারণত এক মাস, তিন মাস, ছয় মাস, ১ বছর, ২ বছর, ৫ বছর ইত্যাদি মেয়াদের জন্য টাকা জমা রাখা হয়। এ হিসাবে ব্যাংক উচ্চ হারে সুদ প্রদান করে তবে মেয়াদ পূর্তির আগে গ্রাহক তার টাকা উত্তোলন করতে পারে না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে উত্তোলন করতে পারবে, তবে এক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো সুদ পাবে না ।

৪) স্কুল সঞ্চয়ী হিসাব : স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য এ-জাতীয় হিসাব খোলা হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের সঞ্চিত টাকা এ হিসাবে জমা রাখতে পারে।

৫) বিমা সঞ্চয়ী হিসাব : এ হিসাবের মাধ্যমে সঞ্চয়ী হিসাব এবং জীবন বিমার সুবিধাও পাওয়া যায়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আমানতকারীদের উক্ত হিসাবে জমা রাখতে হয়। উক্ত জমা টাকা উপর প্রাপ্ত সুদের কিছু অংশ হতে প্রিমিয়াম বাদ দেয়ার পর আমানতকারীর নামে মোট অংকের বিমা করা হয় এবং গ্রাহক উক্ত বিমার সুবিধা ভোগ করে।

৬) বৈদেশিক মুদ্রা স্থায়ী হিসাব : বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ জাতীয় হিসাব খুলে থাকে। এ জাতীয় হিসাবে একমাত্র বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন হয়ে থাকে।

৭) ডিপোজিট পেনশন স্কিম হিসাব : এ হিসাবের মাধ্যমে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয়। এভাবে দীর্ঘমেয়াদে টাকা জমা করে এবং মেয়াদ শেষে এককালীন ভিত্তিতে সুদসহ সকল টাকা ফেরত দেয়া হয়। প্রতি মাসে ১০০, ২০০, ৫০০ টাকা থেকে যেকোনো অংকের সাপ্তাহিক বা মাসিক জমা একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তে সুদসহ জমাকারীকে ফেরত দেওয়া হয়। মুদ্রা বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি বিশেষ গুরুত্ব বহনকারী হিসাব হিসেবে পরিচিত।

৮) ঋণ আমানত হিসাব : কোনো ব্যবসায়ী, শিল্পপতি বা অন্য যেকোনো ঋণগ্রহীতা ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করলে ব্যাংক নগদ অর্থে ঋণ প্রদান না করে গ্রাহকের হিসাবে টাকা স্থানান্তর করে। ঋণগ্রহীতা তার প্রয়োজন অনুযায়ী উক্ত হিসাব হতে চেক কেটে টাকা উত্তোলন করে। চেকের মাধ্যমে উক্ত টাকা উত্তোলন করে বিধায় পুনরায় কোন না কোন ব্যাংকে জমার মাধ্যমে নতুনভাবে ঋণ আমানত স্থায়ী হয়।

৯) রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসাব : সাধারণত সেসব বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য তৈরি, যার নিয়মিত বিদেশ সফর করেন। বৈদেশিক সফরে সরকারি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের কোটা অনেক সময় নিয়মিত সফরকারীদের জন্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় এই হিসাব বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাধারণত আমদানি ও রপ্তানিকারীরা এবং বিদেশি কোম্পানির সাথে ব্যবসায়িক এবং উপদেশমূলক সেবায় নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ এই হিসাবে সুবিধা নিয়ে থাকে।

Content added || updated By
Promotion